WorldOldestPerson EthelCaterham
ক্লাউড টিভি ডেস্ক : মানবজীবনের সীমাহীন সম্ভাবনা ও দীর্ঘায়ুর এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ব্রিটিশ নাগরিক ইথেল কাতেরহাম। বৃহস্পতিবার জীবনের ১১৬তম বছরে পা রাখলেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ (WorldOldestPerson EthelCaterham) হিসেবে বর্তমানে স্বীকৃত এই নারী শান্ত, সুস্থ ও স্থির জীবনযাপন করছেন লন্ডনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সারে এলাকার একটি কেয়ার হোমে। এদিন তাঁর বিশেষ জন্মদিন ঘিরে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং কেয়ার হোমের কর্তৃপক্ষ মিলে আয়োজন করেন এক আবেগঘন উদযাপন।
১৯০৯ সালের ২১ আগস্ট ইংল্যান্ডের শিপটন বেলিঙ্গার গ্রামে জন্ম নেন ইথেল কাতেরহাম। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তাঁর জন্ম হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ারও আগে। অর্থাৎ, তিনি নিজের জীবনে এমন এক দীর্ঘ সময়কাল অতিক্রম করেছেন, যেখানে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড থেকে শুরু করে বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস পর্যন্ত ব্রিটিশ ইতিহাসের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন। গত বছর তাঁর ১১৫তম জন্মদিনে রাজা চার্লস ব্যক্তিগত শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন, যা তাঁর পরিবারের জন্য ছিল এক বিরল স্মৃতি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্রাজিলের নান ইনাহ ক্যানাবারো লুকাস মারা যাওয়ার পর বিশ্বের প্রবীণতম মানুষের খেতাব পান কাতেরহাম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জেরন্টোলজিক্যাল রিসার্চ গ্রুপ এবং লংগেভিকোয়েস্ট ডাটাবেজ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে যে বর্তমানে তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত মানুষ। যদিও সর্বকালের প্রবীণতম মানুষ হিসেবে রেকর্ড এখনও ফ্রান্সের জিন ক্যালমেন্টের দখলে রয়েছে। ক্যালমেন্ট ১২২ বছর ১৬৪ দিন বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
সারে কেয়ার হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইথেল কাতেরহামের জন্মদিন উপলক্ষে প্রচুর শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এবং তাঁর পরিবার গভীরভাবে আবেগাপ্লুত হয়েছেন। বিশেষ দিনটি তিনি শান্তভাবে পরিবার ও আপনজনদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছেন। স্থানীয় সম্প্রদায়ের অনেকেই এই বিশেষ জন্মদিন উপলক্ষে কেয়ার হোমে গিয়েছিলেন শুভেচ্ছা জানাতে।
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হবে ভারত: পিউ রিসার্চের রিপোর্টে চাঞ্চল্য
অনেকে জানতে চান, কীভাবে তিনি এত দীর্ঘ জীবনযাপন করছেন। এ প্রশ্নের উত্তর ইথেল কাতেরহাম অত্যন্ত সরল ভঙ্গিতে দিয়েছেন। তাঁর মতে, “কাউকে নিয়ে কখনো ঝগড়াঝাঁটি করি না, মনোযোগ দিয়ে শুনি এবং নিজের মতো করে চলি।” অর্থাৎ, মানসিক শান্তি, সহনশীলতা এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবই তাঁর দীর্ঘায়ুর মূল রহস্য। চিকিৎসকরা মনে করেন, এই মানসিক স্থিরতা ও সামাজিক বন্ধনই তাঁর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ইথেল কাতেরহাম শুধু একজন দীর্ঘজীবী মানুষ নন, তিনি আসলে এক জীবন্ত ইতিহাস। শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী ব্রিটেন থেকে শুরু করে দুই বিশ্বযুদ্ধ, শীতল যুদ্ধ, ডিজিটাল যুগের উত্থান, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন এবং রাজতন্ত্রের ধারাবাহিক পরিবর্তন—সবই তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। ইতিহাসের এতগুলো অধ্যায় একই জীবনে প্রত্যক্ষ করার বিরল সৌভাগ্য খুব কম মানুষের হয়।
বিশ্ব যখন স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও দীর্ঘায়ুর রহস্য উদঘাটনে নিরন্তর গবেষণা চালাচ্ছে, তখন ইথেল কাতেরহামের জীবন আমাদের দেখায় যে কখনো কখনো উত্তর পাওয়া যায় সরলতায়। এক শতাধিক বছরের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি প্রমাণ করেছেন, মানসিক শান্তি ও ইতিবাচক জীবনধারা মানুষকে এনে দিতে পারে অমূল্য দীর্ঘায়ু।
আরও পড়ুন :
উত্তর কোরিয়ার গোপন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি: বিশ্ব নিরাপত্তায় নতুন দুশ্চিন্তা
ইউক্রেনে প্রতিটি অস্ত্র চুক্তিতে ১০% কমিশন নেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে