Breaking News

জাপানিদের দীর্ঘায়ুর রহস্য

রেকর্ডসংখ্যক শতবর্ষী : জানতে চান জাপানিদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য?

জাপানে শতবর্ষীর সংখ্যা প্রায় এক লাখে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সামাজিক সক্রিয়তা জাপানিদের দীর্ঘায়ুর মূল রহস্য।

জাপানিদের দীর্ঘায়ুর রহস্য: রেকর্ডসংখ্যক শতবর্ষী নাগরিক

জাপানিদের দীর্ঘায়ুর রহস্য

ক্লাউড টিভি ডেস্ক : জাপান আবারও প্রমাণ করল তাদের প্রবীণ সমাজের শক্তি। দেশটিতে শতবর্ষীদের সংখ্যা এবার নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৭৬৩ জন। তাদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশ নারী, যা বিশ্বব্যাপী নজর কাড়ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাকামারো ফুকোকা এক বিবৃতিতে এই প্রবীণদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সমাজে অবদান রাখার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। জাপান বিশ্বের দীর্ঘতম আয়ুষ্কালের দেশ হিসেবে পরিচিত, এবং এই তথ্য সেই ভাবমূর্তিকেই আরও উজ্জ্বল করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানিদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা তাদের দীর্ঘায়ুর মূল রহস্য। খাদ্যাভ্যাসে মাছ ও শাকসবজির আধিক্য রয়েছে। তাছাড়া লাল মাংস ও লবণের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। স্থূলতার হার কম হওয়ায় রোগ প্রতিরোধেও তারা এগিয়ে। ফলে নারীদের গড় আয়ুষ্কাল পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি।

শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে যে সব ফল শাক সবজি

বিকেলে এই ৩ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন: বাড়াতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি

এছাড়া প্রতিদিন হাঁটা, সক্রিয় জীবনযাপন এবং পরিবারকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা দীর্ঘ জীবনে সহায়ক। গবেষকরা মনে করেন, সামাজিক বন্ধন ও মানসিক সুস্থতাও জাপানিদের বয়স বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে দেশটির সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হলেন নারা শহরের ইয়ামাতোকোরিয়ামার বাসিন্দা শিগেকো কাগাওয়া। তার বয়স ১১৪ বছর। অন্যদিকে সবচেয়ে প্রবীণ পুরুষ কিয়োতাকা মিজুনোর বয়স ১১১ বছর। তারা দুজনই স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে জীবনের মূল চাবিকাঠি মনে করেন।

প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাপানে “প্রবীণ দিবস” পালিত হয়। ঐদিন নতুন শতবর্ষীদের প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দনপত্র ও রূপার কাপ উপহার দেন। চলতি বছরও সেই ঐতিহ্য বজায় রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার শুধু সম্মান জানায় না, বরং সমাজে প্রবীণদের মর্যাদাও তুলে ধরে।

১৯৬৩ সালে জাপানে শতবর্ষীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫৩ জন। কয়েক দশকের মধ্যে তা বেড়ে প্রায় এক লাখে পৌঁছেছে। এটাই প্রমাণ করে যে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং সামাজিক সংস্কৃতি দীর্ঘায়ুর বড় সহায়ক। যদিও এত বিপুল সংখ্যক শতবর্ষীকে কেন্দ্র করে প্রশ্নও উঠেছে।

২০১০ সালে পরিচালিত এক নিরীক্ষায় দেখা যায়, জাপানে শতবর্ষী হিসেবে নিবন্ধিত অনেক মানুষ আসলে বহু বছর আগে মারা গেছেন। কখনও কখনও পরিবার পেনশনের স্বার্থে মৃত্যুর খবর গোপন রেখেছিল। এই ঘটনা আলোচনায় এলেও বর্তমান হিসাব অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য বলে দাবি করছে সরকার।

তবে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও গবেষকরা মনে করেন, জাপানিদের দীর্ঘায়ুর রহস্য উপেক্ষা করার মতো নয়। স্বাস্থ্যকর খাবার, সক্রিয় জীবনযাপন এবং সামাজিক সংযোগ তাদের আয়ুষ্কালকে পৃথিবীর অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। তাই বিশ্বজুড়ে জাপান একটি “দীর্ঘায়ুর পাঠশালা” হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।

ভবিষ্যতে জাপানের অভিজ্ঞতা অন্য দেশগুলোকেও পথ দেখাতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সামাজিক সচেতনতা কিভাবে আয়ুষ্কাল বাড়ায় তা শেখার মতো বিষয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাপানের উদাহরণ অনুসরণ করলে বিশ্বব্যাপী গড় আয়ুষ্কাল আরও বাড়তে পারে।

ad

আরও পড়ুন: