OKGrandma JapanSocialInnovation
ক্লাউড টিভি আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৮ জুলাই, ২০২৫ : জাপানে নিঃসঙ্গতা এখন এক গভীর সামাজিক সমস্যা। দিনকে দিন বয়স্ক মানুষ যেমন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন, তেমনি তরুণ প্রজন্মও পরিবারবিচ্ছিন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষিতে টোকিওভিত্তিক একটি সংস্থা ‘ক্লায়েন্ট পার্টনার্স’ চালু করেছে এক অভিনব পরিষেবা—‘ওকে গ্র্যান্ডমা’, যার মাধ্যমে কেউ চাইলে ভাড়ায় একজন ঠাকুমা বা দিদাকে কিছু সময়ের জন্য “নিয়োগ” (OKGrandma JapanSocialInnovation) করতে পারেন।
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য একাকীত্ব দূর করা, আন্তঃপ্রজন্ম সংযোগ তৈরি করা, এবং প্রবীণ নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া।
‘ওকে গ্র্যান্ডমা’—কীভাবে কাজ করে এই পরিষেবা?
‘ওকে গ্র্যান্ডমা’-র আওতায় ৬০ থেকে ৯৪ বছর বয়সি মহিলারা বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হন। যাদের কেউ কেউ অবসরের পর ঘরে বসে থাকতে চান না, আবার কেউ আবার সামাজিক ভাবে সক্রিয় থাকতে চান। এই ‘ঠাকুমারা’ শুধু রান্না বা ঘর সামলানোর কাজই করেন না—তারা বন্ধুর মতো সময় দেন, গল্প বলেন, সম্পর্কের পরামর্শ দেন এবং কখনও কখনও সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যের মতো অংশগ্রহণও করেন।
চাইলে কেউ নিজের জন্মদিনে ঠাকুমার চরিত্রে কাউকে আমন্ত্রণ করতে পারেন, আবার কেউ নিছক এক কাপ চা আর গল্পের সন্ধানেও এই পরিষেবা নিতে পারেন।
দলাই লামার ছদ্মবেশে পালানোর নাটকীয় ইতিহাস: তিব্বতের প্রাসাদ থেকে ভারতের অভিমুখে এক বিপজ্জনক যাত্রা
আধুনিক জাপানের নিঃসঙ্গ বাস্তবতা
জাপানে বর্তমানে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের সংখ্যা ২৯ শতাংশেরও বেশি, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। অপরদিকে, পরিবার গঠন, বিবাহ কিংবা সন্তান ধারণে আগ্রহ কমছে তরুণ প্রজন্মের। ফলে, বহু মানুষ একা থাকছেন বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে ‘ওকে গ্র্যান্ডমা’ এক ধরনের “সামাজিক থেরাপি” হিসেবে কাজ করছে। শুধু তরুণরাই নয়, মাঝবয়সী মানুষ, এমনকি শিশুরাও এই পরিষেবা নিচ্ছেন—কেউ একজন “আপনজন” হিসেবে পাশে থাকুক এই প্রত্যাশায়।
খরচ কত?
এই পরিষেবার খরচও বেশ গ্রহণযোগ্য।
প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩,৩০০ ইয়েন, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ₹২,৭০০।
পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ আলাদা করে ৩,০০০ ইয়েন নেওয়া হয়।
ক্লায়েন্ট পার্টনার্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিষেবায় যুক্ত মহিলারা প্রত্যেকে প্রশিক্ষিত এবং মানসিক, শারীরিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকার ইচ্ছা রাখেন।
প্রবীণদের জন্যও নতুন সম্ভাবনা
এই পরিষেবা কেবল গ্রাহকদের জন্য নয়, প্রবীণ মহিলাদের জন্যও এক নতুন পরিচিতি এবং আয়ের উৎস। কেউ ৬৫ বছর বয়সে অবসরে গেলেও, জীবনের অভিজ্ঞতা ও স্নেহের প্রয়োজনীয়তা যে কখনও শেষ হয় না—এই প্রকল্প তার প্রমাণ।
৭৪ বছর বয়সি ইয়ুকি সাওয়ামুরা, যিনি ‘ওকে গ্র্যান্ডমা’র সঙ্গে যুক্ত, বলেন, “আমি এখন অবসরপ্রাপ্ত, কিন্তু অনেক কাজ করতে চাই। এই কাজ আমাকে জীবিত মনে করায়।” তিনি আরও জানান, তার কাছে গ্রাহকেরা শুধু কাস্টমার নয়, “তারা আমার নাতি-নাতনি হয়ে ওঠে।”
সামাজিক বিশ্লেষকের মূল্যায়ন
জাপানি সমাজ বিশ্লেষক মারিকো তানাকা বলেন, “এই উদ্যোগ কেবল ব্যবসা নয়, বরং এটি ছিন্ন হয়ে যাওয়া সামাজিক বন্ধনগুলোকে পুনরায় গড়ে তোলার এক আন্তরিক প্রচেষ্টা।” তিনি মনে করেন, “আজকের যুগে মানুষ সবচেয়ে বেশি খুঁজছে মানসিক সঙ্গ, আর ‘ওকে গ্র্যান্ডমা’ সেই অভাব পূরণ করছে আন্তরিকতার মাধ্যমে।”
আরও পড়ুন :
যুক্তরাজ্যে ১৬ বছর বয়সিদের ভোটাধিকার! সমীক্ষায় দেখা গেল, তারাই ১৮-র চেয়ে বেশি আগ্রহী ভোটদানে
শিরার সমস্যায় ভুগছেন ট্রাম্প, হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে স্বাস্থ্য জল্পনার অবসান