TimFriede SnakeBiteSurvivor
ক্লাউড টিভি স্পেশাল রিপোর্ট | ১০ জুন ২০২৫ : পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মানুষ খুব কমই আছেন যিনি নিজের শরীরে ২০০ বারেরও বেশি সাপের কামড় ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়েছেন, শুধু বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি হলেন টিম ফ্রিডে (TimFriede SnakeBiteSurvivor), যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের টু রিভারস শহরের এক সাহসী ব্যক্তি, যিনি নিজের শরীরকে করে তুলেছেন এক ‘জীবন্ত গবেষণাগার’।
ফ্রিডের শুরুটা ছিল খুব ছোটবেলায়। মাত্র ৫ বছর বয়সে একটি নিরীহ গার্টার সাপের কামড়ে যে ভালোবাসা জন্মেছিল, তা এক সময় পরিণত হয় এক বিপজ্জনক জীবনে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, টুইন টাওয়ার হামলার ঠিক পরদিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় তিনি দুটি বিষধর সাপের কামড় খাওয়ান নিজেকেই। কোমায় চলে যান। চার দিন পর ফিরে আসেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে। কিন্তু সেখান থেকেই শুরু তাঁর মিথ্রিডাটিজম যাত্রা—একটি প্রাচীন ধারণা, যেখানে বিষের ক্ষুদ্র ডোজ শরীরে নিলে ধীরে ধীরে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
তিনি বিশ্বাস করতেন, শরীরকে বিষের প্রতি অভ্যস্ত করলে ‘প্রাকৃতিক অ্যান্টিভেনম’ তৈরি হতে পারে।
তাই গত ২০ বছরে তিনি ২০০ বারের বেশি সাপের কামড় এবং ৬৫০ বারের বেশি সাপের বিষ ইনজেকশন নিয়েছেন।
বহু বছর কেউই গুরুত্ব দেননি ফ্রিডের সাহসী প্রয়াসকে। কিন্তু ২০১৭ সালে, প্রখ্যাত ইমিউনোলজিস্ট জ্যাকব গ্লানভিল তাঁর একটি ভিডিও দেখে যোগাযোগ করেন। এরপরই শুরু হয় নতুন গবেষণার পথ।
গ্লানভিল বলেন,
“আমি বলেছিলাম, আপনার রক্তের কিছু নমুনা চাই। আর তিনি বললেন, এই ফোনকলের জন্য আমি বহু বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম।”
২০২৫ সালের মে মাসে প্রকাশিত ‘সেল’ জার্নালে জানানো হয়,
ফ্রিডের রক্ত থেকে নেওয়া দুটি অ্যান্টিবডি এবং একটি ওষুধ ‘ভ্যারেসপ্লাডিব’ ব্যবহার করে একটি নতুন অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়েছে। এটি ইঁদুরের শরীরে ১৯টি বিষধর সাপের মধ্যে ১৩টির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ও ৬টির বিরুদ্ধে আংশিক প্রতিরোধ গড়েছে।
কারা রাতে দুধ খাবেন না? বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে হতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশ্বে বাড়ছে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা, ২০৩০ সালের মধ্যেই ছোঁবে ১০ লাখের ঘর
গবেষণা চলছে এখন কুকুরের শরীরে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বিষাক্ত ভাইপার সাপের বিরুদ্ধে।
গ্লানভিলের কোম্পানি সেন্টিভেক্স ইতিমধ্যেই কাজ করছে এমন একটি ইনজেকশন তৈরির দিকে, যা একক ইনজেকশনেই বিভিন্ন প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কাজ করবে। এটি হতে পারে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার।
বিশেষত, যেখানে ৬০০টিরও বেশি বিষধর সাপ রয়েছে বিশ্বজুড়ে, সেখানে একটি সাধারণ অ্যান্টিভেনম ব্যবস্থা সারা বিশ্বের জন্য জীবনরক্ষাকারী হয়ে উঠতে পারে।
এই প্রকল্পকে সাশ্রয়ী রাখতে গ্লানভিল ভারতে উৎপাদনের কথাও ভাবছেন।
তবে বিজ্ঞানী টিমোথি জ্যাকসন, অস্ট্রেলিয়ার ভেনম রিসার্চ ইউনিট থেকে প্রশ্ন তুলেছেন—মানুষের শরীরে এই অ্যান্টিবডি কতটা কার্যকর হবে এবং কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
তবু এই প্রচেষ্টা বিজ্ঞান ও মানবতার পক্ষে এক অভূতপূর্ব ঝুঁকি নেওয়ার ইতিহাস হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন :
৫টি স্টাইলিশ উপায়ে বাড়ির পার্টিতে বিস্কুট পরিবেশন করুন!
ইমরান খানের মুক্তি আসন্ন? ১১ জুনকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত