TrumpIndia ModiUnderPressure
ক্লাউড টিভি, নয়াদিল্লি : ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ ও কথিত “ধমক” নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিতে উঠেছে প্রবল ঝড়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রশ্ন, ভারতের মতো শক্তিশালী দেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি কি এখন ভেঙে পড়ছে? সম্প্রতি ট্রাম্পের একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্যকে ঘিরে উঠেছে বিতর্কের ঝড় (TrumpIndia ModiUnderPressure) । তিনি দাবি করেছেন, ভারত যুদ্ধ থামিয়েছে তার অনুরোধে। শুধু তাই নয়, তিনি আরও বলেছেন, ভারত শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবং আইফোন উৎপাদনে বাধা দেওয়ার জন্য টিম কুককে বলেও দিয়েছেন।
এই বক্তব্য সামনে আসতেই একের পর এক বিরোধী দল সরব হয়েছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বিশেষ সংসদ অধিবেশন আহ্বানের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “পহেলগাঁও হামলা, অপারেশন সিঁদুর, যুদ্ধবিরতি—সবকিছু নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা জরুরি।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, “ভারত যে প্রত্যাঘাত করছিল, তা হঠাৎ থামিয়ে দেওয়ার কোনও যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা মেলেনি। ট্রাম্প দাবি করছেন, তিনিই যুদ্ধবিরতির কারিগর। অথচ সরকার সম্পূর্ণ চুপ।”
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন, “ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী যখন ওয়াশিংটনে, তখন ট্রাম্প দোহা থেকে বলছেন, ভারতকে তিনি বাণিজ্য হুমকি দিয়েছেন। আর সরকার একটিও শব্দ বলছে না।”
তেজস্বী যাদব, সঞ্জয় রাউত-সহ অন্যান্য আঞ্চলিক নেতারাও এই ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তেজস্বী বলেছেন, “আমরা সার্বভৌম দেশ। আমাদের জাতীয় সিদ্ধান্তে তৃতীয় কোনও দেশের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না।”
সঞ্জয় রাউত স্পষ্ট করে বলেন, “আমাদের প্রতিশোধ কোথায়? কেন ট্রাম্প আমাদের যুদ্ধ থামাবে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত থামাতে পারেন না, আর আমাদের যুদ্ধ থামান?”
অপারেশন সিঁদুরকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরলেও, ট্রাম্পের একের পর এক দাবির জবাবে এখনও মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর নীরবতা নিয়েই সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে যখন অতীতে ভারতের অবস্থান ছিল—কাশ্মীর ইস্যু দ্বিপাক্ষিক, এবং কোনও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলছেন, “ভারত একটি আঞ্চলিক শক্তি থেকে আন্তর্জাতিক প্লেয়ার হওয়ার পথে ছিল। জি২০-এর মঞ্চে ভারতের উত্থান হয়েছিল। সেই সময় ট্রাম্পের এই আচরণ এবং ভারতের প্রতিক্রিয়ার অভাব এক বড় ধাক্কা।”
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা তুলনা টেনেছেন ১৯৭১ সালের সঙ্গে। “তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ইন্দিরা গান্ধীকে যুদ্ধ থামাতে বলেন। ইন্দিরা সাফ না করে দেন। এবার ট্রাম্পের বাণিজ্য হুমকিতে যুদ্ধ থেমে গেল? ইতিহাস কি নিজেকে উল্টোভাবে পুনরাবৃত্তি করছে?”
আরও পড়ুন :
দোহায় নীরজ চোপড়ার ঐতিহাসিক থ্রো—নতুন ইতিহাস গড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখালেন পথ
সাদা পোশাকের অধিনায়ক খুঁজতে দিশেহারা ভারত, বুমরাহর বিপক্ষে শাস্ত্রী-গাভাস্কার